রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় দুই অদম্য মেধাবী লেখাপড়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। যমজ দুই ভাই এবার এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাদের বোনও ৪.৭৯ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। দারিদ্র তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই তিন ভাইবোন উপজেলার মনিগ্রাম নতুনপাড়া গ্রামের বাবা আবদুস সামাদ ও মা রুনা লাইলার সন্তান।

বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় থেকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছেন যমজ ভাই গোলাম রাব্বানী রাজন ও গোলাম সাকলায়েন সাজন। তাদের বোন উম্মে কুলসুম সিনথিয়া মনিগ্রাম টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডর অধীনে পরীক্ষা দিয়ে ৪.৭৯ জিপিএ পেয়েছেন।

জানা যায়, তাদের পাঁচ সদস্যের সংসারে উপার্জনক্ষম বাবা দুবার স্টোক করে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। নিজের আগ্রহ ও মামা হুমায়ন কবীবের সহযোগিতায় আর্থিক অনটনের মধ্যে তারা এ সফলতা পেয়েছেন। তবে তাদের চোখেমুখে একটাই চিন্তা— ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও লেখা পড়া করতে পারবে কি?

এ বিষয়ে তাদের মামা হুমায়ন কবীর জানান, পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর থেকে বাড়িতে টিউশনি করে তিন ভাইবোন লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছে। ভগ্নিপতি অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। কোনো কাজ করতে পারেন না। তবে সংসার চালানোর জন্য শরীর ভালো থাকলে তিনি ফার্নিচারের কাজ করেন। যমজ দুই ভাই পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছিল।

যমজ ভাই গোলাম রাব্বানী রাজন ও গোলাম সাকলায়েন সাজন জানান, স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডারে ইনকাম ট্যাক্স অফিসার হওয়ার। যদি কোনো বাধা না আসে, তা হলে স্বপ্নপূরণে এইচএসসিতে ভালো ফল অর্জন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।

মা রুনা লাইলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানান, কোনো কোনো দিন সকালে নাস্তা করার মতো খাবার ঘরে থাকে না। তাদের খেয়ে না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে। দুর্ভোগের মধ্যেও পড়াশোনা থেকে পিছপা হয়নি। বড় মেয়েটা কিছুটা প্রতিবন্ধী। শ্বশুরের কাছ থেকে পাওয়া বাড়ির আট কাঠা জমি ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই। অসুস্থ স্বামীর দিনমজুরের টাকায় কোনো রকমে সংসার চলে। পড়ালেখার জন্য বাড়তি কোনো টাকা দিতে পারেনি। তারা নিজে টিউশনি করে ও তাদের মামার ফার্নিচারের দোকানে কাজ করে পড়া লেখার খরচ জুগিয়েছে। বড় মেয়ে লেখাপড়ার ফাঁকে সহযোগিতা করেছে।

তিনি আরও জানান, তাদের দুই কক্ষবিশিষ্ট আধাপাকা টিনের বাড়িতে এক রুমে থাকে যমজ দুই ভাই। আরেক রুমে বোন। আরা বারান্দায় থাকেন বাবা-মা।

এ বিষয়ে মনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু মনোয়ার হোসেন জানান, যমজ দুই ভাই গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তারা অত্যন্ত মেধাবী। তবে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে। কোনো সুহৃদয় ব্যক্তি তাদের সহযোগিতা করলে উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারবে তারা।